‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধের মূলভাব এবং অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
প্রমথ চৌধুরী বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব, যিনি তার সৃজনশীল চিন্তা ও নতুনত্বের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের ধারা পরিবর্তন করেছেন। বাংলা গদ্যসাহিত্যের শিষ্ট চলিত রীতির প্রবর্তক হিসেবে তার ভূমিকা অপরিসীম। তার অন্যতম বিখ্যাত প্রবন্ধ 'যৌবনে দাও রাজটিকা'—যা তার মানবিক জীবনদর্শন এবং নতুন সমাজ গঠনের স্বপ্নের প্রতিফলন।
প্রবন্ধে প্রমথ চৌধুরী মানসিক যৌবনের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তার মতে, যৌবন মানবজীবনের সৃজনশীল ও অনুপ্রেরণাদায়ক সময়। এটি অফুরন্ত শক্তি ও সৃষ্টিশীলতার প্রতীক। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন যে, যৌবন হলো এমন এক শক্তি যা নতুন চিন্তা ও কর্মের মাধ্যমে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। অথচ সমাজে যৌবনকে ভয়ের দৃষ্টিতে দেখা হয় এবং তার বিকাশকে রুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়। তিনি প্রাচীনপন্থী সমাজের এই মানসিকতা কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন।
প্রমথ চৌধুরী মনে করেন, ব্যক্তিগত জীবন ক্ষণস্থায়ী হলেও, জাতির যৌবন চিরস্থায়ী। একটি সমাজ তখনই উন্নত হতে পারে, যখন তার সদস্যরা মানসিকভাবে যৌবনের চেতনায় উদ্দীপ্ত থাকবে। তিনি বলেন, দেহের যৌবনের পাশাপাশি মনের যৌবনের বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন, যা সমাজের ফাল্গুনকে চিরকাল ধরে রাখতে সক্ষম। বার্ধক্যের সীমাবদ্ধতা এবং শৈশবের অপরিণত অবস্থার বিপরীতে যৌবনই পারে সমাজে পরিবর্তন আনতে।
তিনি সমাজকে একটি বহুব্যক্তির সমষ্টি হিসেবে বিবেচনা করেছেন। যে সমাজে বহু মানুষের মানসিক যৌবন থাকে, সেই সমাজই প্রকৃত অর্থে যৌবনময়। তিনি বলেন, “সমগ্র সমাজে ফাল্গুন চিরদিন বিরাজ করছে,” অর্থাৎ নতুন প্রাণ, নতুন আশা, এবং নতুন চিন্তার চিরকালীন উদ্ভব। সমাজের এই নিরন্তর গতিশীলতাই মানবজাতির অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি।
প্রমথ চৌধুরী শিক্ষানীতি ও সমাজনীতির বিরোধিতা করেছেন, যেখানে ইঁচড়ে পাকানো এবং জাগ দিয়ে পাকানোর প্রচলন রয়েছে। তার মতে, এটি মানবজীবনের সৃজনশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করে এবং সমাজে স্থবিরতা আনে। তিনি বিশ্বাস করেন, মানসিক যৌবনের কপালে রাজটিকা পরানোর মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ও সৃজনশীল সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।
‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধে প্রমথ চৌধুরী নতুন প্রজন্মের উদ্যম ও সৃজনশীলতাকে সন্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জড়বাদী ও মায়াবাদী চিন্তাধারার বিরোধিতা করে যৌবনের উদ্দীপনাকে সমাজের সেবায় কাজে লাগানোর তাগিদ দিয়েছেন। তার প্রবন্ধে শিক্ষানীতি, সামাজিক মানসিকতা এবং প্রগতিশীল চিন্তার প্রতি গভীর প্রভাব বিদ্যমান। এটি শুধু সাহিত্যের নয়, সমগ্র সমাজের জন্য এক মূল্যবান দিকনির্দেশনা।
প্রমথ চৌধুরীর এই নতুন ভাবনা বাংলা সাহিত্যেরইতিহাসে তাকে একটি অনন্য স্থানে অধিষ্ঠিত করেছে।
১। প্রমথ চৌধুরীর পরিচিতি কী?
উত্তর: তিনি বাংলা সাহিত্যের শিষ্ট চলিতগদ্যরীতির প্রবর্তক এবং সৃজনশীল লেখক।
২। প্রমথ চৌধুরীর কোন প্রবন্ধটি বিখ্যাত?
উত্তর: ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’।
৩। প্রবন্ধটির মূলভাব কী?
উত্তর: মানসিক যৌবনের চেতনা প্রতিষ্ঠাএবং সৃজনশীলতার বিকাশ।
৪। যৌবনের প্রধান গুণ কী?
উত্তর: সৃষ্টিশীলতা এবং অফুরন্ত শক্তি।
৫। যৌবনকে সমাজ কীভাবে দেখে?
উত্তর: ভয়ের দৃষ্টিতে এবং বাধা দিয়ে থাকে।
৬। বার্ধক্যের সীমাবদ্ধতা কী?
উত্তর: নতুন কিছু সৃষ্টি বা বর্জন করতেঅক্ষম।
৭। প্রমথ চৌধুরী সমাজকে কীভাবে দেখেছেন?
উত্তর: বহুব্যক্তির সমষ্টি হিসেবে।
৮। যৌবনের চিরস্থায়ী উপমা কী?
উত্তর: সমাজে ফাল্গুনের চিরদিনের উপস্থিতি।
৯। মানসিক যৌবন কীভাবে স্থায়ী করা যায়?
উত্তর: সমগ্র সমাজের জীবনপ্রবাহের সঙ্গেনিজেকে যুক্ত রেখে।
১০। প্রাচীনপন্থীরা যৌবনকে কী মনে করেন?
উত্তর: বিপদের উৎস।
১১। ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে প্রমথ চৌধুরীর মত কী?
উত্তর: এটি ক্ষণস্থায়ী, তবে জাতির জীবনপ্রবাহচিরস্থায়ী।
১২। প্রবন্ধে ‘রাজটিকা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: যৌবনের মর্যাদা ও স্বীকৃতি।
১৩। শিক্ষানীতির মূল সমস্যা কী বলে উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: ইঁচড়ে পাকানোর প্রবণতা।
১৪। সমাজনীতির উদ্দেশ্য কী বলে সমালোচনা করেছেন?
উত্তর: জাগ দিয়ে পাকানো।
১৫। যৌবন কিসের প্রতীক?
উত্তর: সৃজনশীলতা, উদ্যম, ও পরিবর্তনের।
১৬। প্রমথ চৌধুরীর মতে যৌবনের ভূমিকা কী?
উত্তর: সমাজে নতুন চিন্তা ও কর্ম সঞ্চালনাকরা।
১৭। ফাল্গুনের প্রতীক কী নির্দেশ করে?
উত্তর: সমাজে নবজীবনের চিরন্তন সঞ্চার।
১৮। বার্ধক্যের বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: নতুন কিছু সৃষ্টিতে অক্ষমতা।
১৯। যৌবনকে রাজটিকা না দিয়ে কী দেওয়া হয়?
উত্তর: রাজদণ্ড।
২০। জড়বাদীদের সমস্যা কী?
উত্তর: তারা অস্থির প্রাণকে বাদ দিয়েস্থিরত্বের দিকে ঝোঁকে।
২১। প্রবন্ধটি কেন রচিত?
উত্তর: মানসিক যৌবনের গুরুত্ব তুলে ধরতে।
২২। প্রমথ চৌধুরী যৌবনের কী আশা করেছিলেন?
উত্তর: এটি সমাজে সৃজনশীলতার উৎস হবে।
২৩। সমাজে যৌবনের অভাব কী ঘটায়?
উত্তর: স্থবিরতা এবং অগ্রগতির অভাব।
২৪। নতুন প্রজন্মের প্রতি লেখকের বার্তা কী?
উত্তর: সৃজনশীলতা ও উদ্যমকে কাজে লাগাতে।
২৫। প্রমথ চৌধুরী যৌবনের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে চান কেন?
উত্তর: যৌবনই সমাজের অগ্রগতির চাবিকাঠি।
২৬। মানসিক যৌবন কীভাবে অর্জন করা যায়?
উত্তর: জীবনের স্রোতের সঙ্গে নিজেকে যুক্তরেখে।
২৭। যৌবনের শক্তিকে প্রবন্ধে কীভাবে চিত্রিত করা হয়েছে?
উত্তর: অফুরন্ত শক্তি এবং নতুন সৃষ্টিরক্ষমতা হিসেবে।
২৮। ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধের প্রধান প্রতিপাদ্য কী?
উত্তর: যৌবনের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা।
২৯। শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত?
উত্তর: সৃজনশীলতার বিকাশ।
৩০। প্রবন্ধটি থেকে সমাজের জন্য কী শিক্ষণীয়?
উত্তর: যৌবনকে উৎসাহিত করে সমাজের অগ্রগতিনিশ্চিত করা।
৩১। ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধের রচয়িতা কে?
উত্তর: প্রমথ চৌধুরী।
৩২। বাংলা সাহিত্যে চলিত ভাষার প্রবর্তক কে?
উত্তর: প্রমথ চৌধুরী।
৩৩। প্রমথ চৌধুরীরর ছদ্মনাম কী?
উত্তর: বীরবল।
৩৪। ‘আমি বাঙালি জাতির বিদুষক মাত্র’- উক্তিটি কে করেছিলেন?
উত্তর: প্রমথ চৌধুরী।
৩৫। প্রমথ চৌধুরী কত সালে ‘সবুজপত্র’ পত্রিকা প্রকাশ করেন?
উত্তর: ১৯১৪ সালে।
৩৬। ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থের অন্তর্গত?
উত্তর: ‘প্রবন্ধ সংগ্রহ’
৩৭। যৌবনকে কী থেকে রক্ষার জন্য রাজটিকা দেওয়া আবশ্যক?
উত্তর: বসন্ত থেকে রক্ষার জন্য।
৩৮। ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধ অনুসারে কাকে শাসন করার ক্ষমতা মানুষের নেই?
উত্তর: প্রকৃতিকে শাসন করার ক্ষমতা।
৩৯। আমাদের শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: ইঁচড়ে পাকানো।
৪০। আমাদের সমাজনীতির উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: জাগ দিয়ে পাকানো।
৪১। যৌবন সমাজে স্থান না পেয়ে কী রূপ ধারণ করেছে?
উত্তর: বিকৃত রূপ।
৪২। প্রবন্ধে বর্ণিত উদয়ন কোন রাজ্যের যুবরাজ ছিলেন?
উত্তর: কৌশাম্বি রাজ্যের।
৪৩। ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধে উল্লিখিত সিদ্ধার্থ কে ছিলেন?
উত্তর: কপিলাবস্তু রাজ্যের যুবরাজ।
৪৪। সংস্কৃত কবিরা কোন বিষয়কে যৌবনের ধর্ম বলেছেন?
উত্তর: ভোগকে
৪৫। প্রমথ চৌধুরীর মতে মন বিগড়ে গেলে কী হয়?
উত্তর: দেহ ও মন আলাদা হয়ে যায়।
৪৬। কারা স্ত্রী নিন্দায় ওস্তাদ?
উত্তর: যারা স্ত্রী জাতিকে কেবল ভোগেরসামগ্রী বলে মনে করে।
৪৭। ‘শৃঙ্গার শতক’ কী?
উত্তর: অতিমাত্রায় ভোগবিলাসপূর্ণ জীবনযাপনেরপর্যায়।
৪৮। ‘বৈরাগ্য শতক’ কী?
উত্তর: বার্ধক্যের অর্থহীন জীবনযাপন।
৪৯। যযাতি কে ছিলেন?
উত্তর: ব্রহ্মাচার্য, বিজ্ঞ ও ধর্মশীলরাজা।
৫০। যযাতির কাঙ্ক্ষিত যৌবন কীরূপ?
উত্তর: অনিত্য।
৫১। যযাতি কার কাছে যৌবন ভিক্ষা করেছিলো?
উত্তর: পুরুর কাছে।
৫২। ‘যৌবন অনিত্য’ বিষয়ে কারা একমত?
উত্তর: ব্রাহ্মণ ও নাগরিক সকলে।
৫৩। বামন-বটের অপর নাম কী?
উত্তর: অক্ষয়-বট।
৫৪। ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধ অবলম্বনে কোন জীবনে ফাল্গুন চিরকাল বিরাজ করে?
উত্তর: সমগ্র সমাজ জীবনে
৫৫। কোন যৌবনকে লেখক সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন?
উত্তর: মানসিক যৌবনকে।