মুনীর চৌধুরী
স্বাধীনতা পূর্ব বাংলাদেশের আধুনিক নাটকের অন্যতম ও সফল নির্মাতা। নাটকের বিষয়
আঙ্গিক শিল্পদৃষ্টি ও সঞ্চায়নগত উৎকর্ষ বিবেচনায় তাঁর শ্রমনিষ্ঠা আন্তরিকতা ও
অবদান চিরস্মরণীয়। তাঁর প্রথম ও পূর্ণাঙ্গ নাটক রক্তাক্ত প্রান্তর যুদ্ধবিরোধী
চেতনায় ভাস্বর ।
দুটো বিশ্বযুদ্ধের
ভয়াবহ ফলাফল বিশ শতকে বুদ্ধিজীবী মননে ভিন্নতর চেতনার জন্ম দেয়। কেবল
রোমান্টিকতা নয়, বস্তুনিষ্ঠ ভাবনা তাদের তাড়িত করে। দুটি বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা
গোটা বিশ্বের জীবনবাদী বুদ্ধিজীবী সমাজকে যুদ্ধবিরোধী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছে।
মানবতাবাদী মুনীর চৌধুরীর মননে যুদ্ধের প্রচণ্ডতা নাড়া দিয়েছিল, যুদ্ধের অশুভ
পরিণাম তাকে যুদ্ধবিরোধী করে তুলেছিল। ফলে যুদ্ধ নয়, শান্তি ও হৃদয় বৃত্তির
প্রবৃত্তি তার সাহিত্য মানসে প্রাধান্য বিস্তার করে । ‘রক্তাক্ত প্রান্তর' এ
সত্যের বাহক। একটি বিশেষ বক্তব্য প্রাধান্য পাবার কারণে নাটকে ইতিহাস ঐতিহ্যের
পাশাপাশি পুরাণ প্রসঙ্গের অবতারণা হয়েছে বক্তব্য প্রচারের ভিত্তিরূপে ।
‘রক্তাক্ত
প্রান্তর' মুনীর চৌধুরীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ মৌলিক নাটক। নাটকটি পানিপথের তৃতীয়
যুদ্ধের (১৭৬১) ঘটনা অবলম্বনে রচিত। সে বিচারে এটি ঐতিহাসিক নাটকের পর্যায়ভুক্ত।
কিন্তু নাটকটির ইব্রাহিম কার্দির চরিত্র নির্মাণে মহাভারতের ‘কর্ণকুন্তি সংবাদ'
অংশের অদ্ভূত সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নাট্যকার মুনীর
চৌধুরী ইব্রাহিম কার্দির চরিত্র চিত্রণে সম্ভবত মহাভারতের ‘কর্ণকুন্তি সংবাদ'
দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। নানাযুদ্ধ বিদ্যায় প্রশিক্ষিত এবং কৌরব পক্ষের মহাবীর
কর্ণ- কুন্তির কুমারী বয়সের পুত্র। সূর্যের ঔরসে তার জন্ম হয়।
কিন্তু কুন্তির
কুমারী অবস্থায় মা হওয়ার কারণে লোকাপদের ভয়ে কর্ণকে ভাসিয়ে দেয়। অতঃপর কর্ণ
সুত বংশীয় (নীচ বংশীয়) অধিরথ ও রাধার আশ্রয়ে বড় হতে থাকেন। তার মধ্যে বিচিত্র
গুণের সমাবেশ লক্ষ্য করে এবং যুদ্ধ নৈপুণ্যে মুগ্ধ হয়ে দুর্যোধন কর্ণকে সেনাপতি
রূপে নিয়োগ দেন।
এদিকে কৌরবদের
সাথে পাণ্ডবদের যুদ্ধের প্রাক মূহূর্তে পাণ্ডবদের মা কুন্তি তার কানীন পুত্র
(কুমারী বয়সের পুত্র) কর্ণের কাছে যায় পাণ্ডবদের অর্থাৎ স্বজাতির পক্ষে যুদ্ধ
করার অনুরোধ নিয়ে। কিন্তু কর্ণ এতে কোন মতেই সম্মত হয় না। তাঁর যুক্তি হলো
পাণ্ডবরা তার স্বজাতি হলেও তাদের কাছে সে স্থান পায় নি। সে মানুষ হয়েছে অধিরথ
রাধার কাছে এবং সে হিসেবে কর্ণ তাদেরকেই মাতাপিতা হিসেবে জানে। তার গুণের সমাদর
করে তাকে সেনাপতি পদে নিয়োগ দিয়ে কৌরবরাই তাকে সম্মানিত করেছে এবং তার ভরসাতেই
কৌরবরা শত্রুর সাথে যুদ্ধ করতে যাবে। সে কিছুতেই তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে
পারবে না। কুন্তীর অনেক অনুরোধ উপরোধ ভয়, লোভ সে প্রত্যাখ্যান করে। মায়ের
উদ্দেশ্যে সে বলে- “আপনি আমাকে ত্যাগ করে ঘোর অন্যায় করেছেন তাতে আমার যশ ও
কীর্তি নষ্ট হচ্ছে। জন্মে ক্ষত্রিয় হলেও আপনার জন্য আমি ক্ষত্রিয়োচিত সংস্কার
পাইনি। কেউ জানে না যে আমি পাণ্ডবদের ভ্রাতা। এখন যুদ্ধকালে যদি পাণ্ডব পক্ষে যায়
তবে ক্ষত্রিয়রা আমাকে কি বলবেন? ধার্ত রাষ্ট্রগণ আমার সর্ব কামনা পূর্ণ করেছেন
আমাকে সম্মানিত করেছেন এখন আমি কি করে তা নিষ্ফল করতে পারি? যারা আমাকে শ্রদ্ধা
করেন যারা আমার ভরসায় যুদ্ধ করতে যাবেন, তাদের মনোরথ আমি কি করে ছিন্ন করব?”
‘রক্তাক্ত
প্রান্তর' নাটকের নায়ক ইব্রাহিম কার্দি পাশ্চাত্য রণ বিদ্যায় পারদর্শী।
আত্মমর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন কার্দি স্বজাতির কাছে নিজ যোগ্যতার সমাদর পাইনি,
চাকরি তো নয়ই। চাকরি দিয়েছে মারাঠাধিপতি। তাই মুসলমান হয়েও পানিপথের যুদ্ধে
তাকে মুসলমানদের বিপক্ষে লড়তে হয়েছে। তিনি বেঈমান নন, কর্তব্য পরায়ন পুরুষ। তার
স্বীকারোক্তি, “সাধারণ সৈনিকের কাজ করেছি ফরাসিদের সৈন্য বাহিনীতে। আধুনিক রণবিদ্যা
তারাই আমাকে শিখিয়েছে। যৌবনে চাকরির সন্ধানে সকল জাতের শিবিরে হানা দিয়েছি।
উপযুক্ত মর্যাদা দিয়ে বোর্ড নিযুক্ত করতে চাইনি। সেদিন সেনা সেনাধ্যক্ষের পদে
যোগদান করার জন্য যিনি আমাকে আমন্ত্রণ জানান, তিনি হলেন মারাঠাধিপতি। তারপর এ
পানিপথের প্রান্তরে শুরু হয়েছে হিন্দুস্থানের মুসলিম শক্তির সাথে মারাঠার সংঘর্ষ।
মুসলিম শক্তির জয় হোক আমি মনে প্রাণে কামনা করি। কিন্তু যারা আমার আশ্রয়দাতা,
পালনকর্তা, আমার রক্তের শেষ বিন্দু ঢেলে তাদের স্বার্থরক্ষার জন্য লড়াই করে
যাবো।”
ইব্রাহিম কার্দি
তার প্রতিজ্ঞায় অটল থেকেছেন। কোন প্রকার প্রলোভন তাকে দুর্বল করতে পারে নি। তার
শ্বশুর মেহেদী বেগের মৃত্যুর পর সমস্ত সম্পত্তি ভোগ দখলের প্রস্তাব এসেছে স্ত্রী
জোহরার কাছ থেকে। কর্মক্ষম আত্মমর্যাদা সম্পন্ন কার্দি তাতে সম্মত হয় নি।
কর্ণ ও ইব্রাহিম
কার্দি ট্রাজিক চরিত্র দুটির পরিণামেও রয়েছে দারুণ মিল। কর্ণের মৃত্যু হয় নিজ
ভ্রাতা অর্জুনের হাতে। মৃত্যুকালে তার পাশে ছিল না কোন আত্মীয় পরিজন। যুদ্ধে তার
দল পরাজিত হয়। তাঁর মৃত দেহের কাছে মাতা কুন্তী গিয়েছে ।
আদর্শগত কারণে
রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকে স্ত্রী জোহরার সাথে কার্দির ব্যবধান সৃষ্টি হলেও এবং
স্বামী স্ত্রী দু-পক্ষে লড়াই করলেও তাদের অন্তরের টানে ঘাটতি পড়ে নি। বিপদের
ঝুঁকি নিয়ে তারা রাতের অন্ধকারে মিলিত হয়েছে। পরক্ষনেই সে আদর্শের দ্বন্দ্বময়
পাহাড় তাদের পুনরায় দু'প্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। ভালোবাসার ব্যাকুলতা ও আন্তরিকতা
সে ক্ষেত্রেও প্রবল ।
কার্দি বলেছেন, “ভারতের
মুসলিম শক্তি জয়যুক্ত হোক, তাঁর পূর্ব গৌরব সে ফিরে পাক বিশ্বাস করো, এ কামনা
আমার মনে অহরহ জ্বলছে। কিন্তু ভাগ্য আমাকে প্রতারিত করছে। সে গৌরবে অংশগ্রহণ করার
অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছে।”
ঘন অন্ধকারে যুদ্ধ
শেষে বন্দি ইব্রাহিম কার্দি লালরক্তে রঞ্জিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। কিন্তু পাশে
তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে পান নি। জোহরা তার জীবিত স্বামীকে পান নি। পেয়েছেন তার
মৃতদেহ। বীরধর্ম ও কৃতজ্ঞতা জয়ী হয়েছে জীবনের বিনিময়ে। কর্ণ চরিত্র সম্পর্কে
বলা হয়েছে-“কর্ণ বেছে নিলেন মহত্ত্ব তাঁর মৃত্যুর বিনিময়ে।”
আলোচনার পরিশেষে
বলা যায় যে, রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকের ইব্রাহিম কার্দি এবং ‘কর্ণ কুন্তীর
সংবাদের' কর্ণ চরিত্র যেন একই অবয়ব সমৃদ্ধ। অথচ মুনীর চৌধুরীর নতুনত্ব ও
আধুনিকভাবে পুরাণের পূননির্মাণ।
***২***
মুনীর
চৌধুরীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ নাটক রক্তাক্ত
প্রান্তর তাঁর নাট্যকার হিসেবে অসাধারণ দক্ষতার পরিচায়ক। যুদ্ধবিরোধী
চেতনায় উদ্ভাসিত এই নাটকটি ঐতিহাসিক পটভূমি, মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং নৈতিক
দ্বন্দ্বের গভীর বিশ্লেষণ দ্বারা সমৃদ্ধ। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের (১৭৬১) ঘটনাকে কেন্দ্র
করে রচিত এই নাটকে পুরাণ, ইতিহাস এবং ব্যক্তিগত-সামাজিক আদর্শের মিশ্রণে এক অনন্য
নাট্যবিশ্ব গড়ে তোলা হয়েছে। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ইব্রাহিম কার্দি যেমন কর্ণের
সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, তেমনি তাঁর ব্যক্তিত্ব, আত্মমর্যাদাবোধ এবং কর্তব্যপরায়ণতা
নাটকটিকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে মানবতাবাদী লেখকদের মননে যুদ্ধবিরোধী চেতনার যে প্রবাহ দেখা
যায়, তারই প্রতিফলন ঘটে মুনীর চৌধুরীর নাট্যভাবনায়। রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকটি মূলত যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা, মানবিক
সম্পর্কের দ্বন্দ্ব এবং আদর্শিক সংঘাতের প্রতিচ্ছবি। যুদ্ধের ভয়াবহতা, সামাজিক
বিভাজন, এবং ব্যক্তির দায়বদ্ধতার প্রশ্নকে নাটকে গভীরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
মুসলিম সেনাধ্যক্ষ ইব্রাহিম কার্দি, যিনি যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী এবং আদর্শগতভাবে
মুসলিম শক্তির বিজয় কামনা করেন, তবু পেট্রনের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধে মুসলিমদের
বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করেন। তাঁর চরিত্রটি বাস্তবতা, মানবিকতার টানাপোড়েন এবং
ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তার এক অনন্য উদাহরণ।
ইব্রাহিম
কার্দি একটি বহুমাত্রিক ও ট্রাজিক চরিত্র। তিনি আধুনিক রণবিদ্যায় প্রশিক্ষিত একজন দক্ষ
যোদ্ধা। তাঁর আত্মমর্যাদাবোধ, কর্তব্যপরায়ণতা এবং নৈতিকতার প্রতি অবিচল থাকা তাকে
নাটকের কেন্দ্রে স্থাপন করেছে। নিজের স্বজাতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকা সত্ত্বেও
কৃতজ্ঞতাবোধে তিনি মারাঠাদের পক্ষে লড়াই করেন। কার্দি বলেন, “যারা আমার
আশ্রয়দাতা, পালনকর্তা, আমার রক্তের শেষ বিন্দু ঢেলে তাদের স্বার্থরক্ষার জন্য
লড়াই করে যাবো।” এই উক্তি তাঁর আদর্শগত অটলতার প্রকাশ।
কার্দির
চরিত্রে কর্ণের ছায়া স্পষ্ট। কর্ণ যেমন কুন্তীর কুমারী অবস্থার পুত্র হওয়ায় বঞ্চিত
এবং কৌরবদের আশ্রয়ে বেড়ে ওঠেন, তেমনি কার্দিও মুসলিম সেনাপতির পুত্র হয়েও মুসলিম
সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারেননি। কর্ণের মতো কার্দিও বিশ্বাসঘাতকতার বিরোধী এবং
তাঁর প্রতিজ্ঞায় অটল। উভয় চরিত্রের শেষ পরিণতিও মর্মস্পর্শী ট্র্যাজেডিতে পর্যবসিত
হয়।
মুনীর
চৌধুরী পুরাণকে আধুনিক প্রেক্ষাপটে পুনর্নির্মাণ করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে।
মহাভারতের কর্ণ এবং কুন্তীর সম্পর্কের আদলে কার্দির নৈতিক দ্বন্দ্ব ও আদর্শিক
সংকটকে চিত্রিত করা হয়েছে। কর্ণ যেমন নিজের পরিচয় এবং স্বীকৃতি না পাওয়ার বেদনায়
পুড়েছেন, তেমনি কার্দিও স্বজাতির কাছ থেকে বঞ্চিত হয়ে মারাঠাদের প্রতি আনুগত্য
প্রদর্শন করেছেন। তবে মুনীর চৌধুরী কর্ণের আদি চরিত্রে আধুনিক যুগের বাস্তবতার
মিশ্রণ ঘটিয়ে ইব্রাহিম কার্দিকে নতুন দ্যোতনা দিয়েছেন।
রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ইব্রাহিম কার্দি এবং তাঁর স্ত্রী
জোহরার সম্পর্ক। যুদ্ধের কারণে তাঁদের আদর্শগত অবস্থান ভিন্ন হলেও ভালোবাসা ও
আন্তরিকতার টান তাঁদের কাছাকাছি নিয়ে আসে। জোহরা বিপদের ঝুঁকি নিয়ে কার্দির সঙ্গে
মিলিত হন, কিন্তু আদর্শিক দ্বন্দ্ব তাঁদের আবার আলাদা করে দেয়। এই সম্পর্ক নাটকের
আবেগময়তার গভীরতা বাড়িয়েছে।
নাটকের
শেষাংশে ইব্রাহিম কার্দি বন্দি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যু যেমন কর্ণের
ট্র্যাজেডির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, তেমনি এটি যুদ্ধের নিষ্ঠুরতার নিদর্শন। কর্ণের
মতোই কার্দিও মৃত্যুর সময়ে একাকী। কিন্তু তাঁর জীবনের আদর্শ এবং আত্মত্যাগ পাঠকের
হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলে।
মুনীর
চৌধুরীর রক্তাক্ত প্রান্তর কেবল
ঐতিহাসিক পটভূমিতে রচিত একটি নাটক নয়; এটি মানবিক সংকট, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, এবং
ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তার এক চিরন্তন উদাহরণ। কর্ণ ও ইব্রাহিম কার্দির চরিত্রের মিল এবং
নাটকের যুদ্ধবিরোধী বার্তা একে অনন্য মাত্রা দিয়েছে। পুরাণের আধুনিকীকরণ এবং
মানবতাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে এটি বাংলা সাহিত্যে এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন।