সংক্ষেপে সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সিরাজউদ্দৌলা নাটক সিকান্দার আবু জাফর রচিত একটি বিখ্যাত নাটক, যা বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার জীবন, পলাশীর যুদ্ধ এবং তার পতনের করুণ কাহিনীকে কেন্দ্র করে রচিত। নাটকটি ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হয় এবং এটি বাংলা নাট্যসাহিত্যে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে।
নাটকের পটভূমি
নাটকের মূল পটভূমি ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধ এবং তার পরবর্তী ঘটনাবলী। নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিশ্বাসঘাতক সেনাপতি মীরজাফর ও অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারীদের প্রভাবে ইংরেজদের কাছে নবাব পরাজিত হন। নাটকে ইতিহাসকে শুধু তুলে ধরা নয়, বরং সেই সময়কার সামাজিক, রাজনৈতিক এবং মানবিক দ্বন্দ্বের প্রতিফলনও ঘটানো হয়েছে।
নাটকের বিষয়বস্তু
১. পলাশীর যুদ্ধ ও বিশ্বাসঘাতকতা
নাটকে পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতার পতনের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মীরজাফর, রায়দুর্লভ এবং ঘষেটি বেগমের মতো চরিত্ররা কৌশলে নবাবকে ষড়যন্ত্রের জালে ফেলে ইংরেজদের সহযোগিতা করে।
২. সিরাজউদ্দৌলার চরিত্র
সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন তরুণ, সরল, কিন্তু অভিজ্ঞতাহীন শাসক। নাটকে তার আবেগপ্রবণতা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবকে কেন্দ্র করে ট্র্যাজেডি তৈরি হয়েছে। তার সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের চিত্রও নাটকে উদ্ভাসিত।
3. ইংরেজদের আগ্রাসন
নাটকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজনৈতিক কৌশল, বিশ্বাসঘাতকতা এবং শাসনকাঠামো দখলের প্রক্রিয়া তুলে ধরা হয়েছে। এটি বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায় হিসেবে চিত্রায়িত হয়েছে।
4. পরিণতি ও করুণ মৃত্যু
যুদ্ধের পর সিরাজউদ্দৌলা পালিয়ে যান কিন্তু ধরা পড়েন। মীরজাফরের পুত্রের নির্দেশে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। নাটকের শেষে নবাবের পতন শুধু একটি ব্যক্তির নয়, বরং একটি জাতির স্বাধীনতার শেষ অধ্যায় হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
নিভৃত বাংলার আপডেট পেতে Google News এ Follow করুন
চরিত্রসমূহ
নাটকে প্রধান চরিত্র হিসেবে সিরাজউদ্দৌলা ছাড়াও উল্লেখযোগ্য চরিত্রগুলো হলো:
মীরজাফর
ঘষেটি বেগম
রায়দুর্লভ
রবার্ট ক্লাইভ
নবাব আলীবর্দী খাঁ
লুৎফুন্নেসা (সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী)
মোট ৩৯টি চরিত্র নাটকে রয়েছে, যা বাংলার ইতিহাস ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিত্ব করে।
মূলভাব
সিরাজউদ্দৌলা নাটকের মূলভাব হলো বিশ্বাসঘাতকতার ফলে স্বাধীনতা হারানোর কাহিনী। এটি বাংলার শেষ নবাবের জীবনের ট্র্যাজেডি এবং ইংরেজ শাসনের সূচনা নিয়ে লেখা। নাটকে নবাবের পতনের মাধ্যমে মানবিক ও রাজনৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের গুরুত্বকে তুলে ধরা হয়েছে।
উপসংহার
সিরাজউদ্দৌলা নাটক শুধু একটি ঐতিহাসিক কাহিনী নয়; এটি বাংলা সাহিত্যে একটি শক্তিশালী নাট্যকর্ম যা ইতিহাস ও মানবিক আবেগের এক অসাধারণ মেলবন্ধন। নাটকটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় ঐক্যের অভাব এবং ষড়যন্ত্রের কারণে কীভাবে একটি জাতির স্বাধীনতা হারিয়ে যায়।