রাজশাহী বিভাগের পাঁচটি উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য নিদর্শন

রাজশাহী বিভাগের পাঁচটি উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য নিদর্শন:


১। ছোট সোনা মসজিদ


বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ ছোট সোনা মসজিদ। এটি প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড় নগরীর উপকণ্ঠে পিরোজপুর গ্রামে নির্মিত হয়। বর্তমানে এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের শাসনামলে (১৪৯৪-১৫১৯ খ্রি.) ওয়ালি মোহাম্মদ আলি নামের এক ব্যক্তি মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের শিলালিপি থেকে জানা যায় যে এটি মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর একটি উৎকৃষ্ট নিদর্শন।


মসজিদটি হোসেন-শাহ স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত। এর বাইরের দিক একসময় সোনালি রঙের আবরণে আবৃত ছিল, যা সূর্যের আলোয় ঝলমল করত। মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ৮২ ফুট দীর্ঘ ও পূর্ব-পশ্চিমে ৫২.৫ ফুট চওড়া। এর উচ্চতা ২০ ফুট এবং দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় ৬ ফুট। মসজিদের খিলান ও গম্বুজ ইট দিয়ে তৈরি।


২। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার


পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, যা সোমপুর মহাবিহার নামেও পরিচিত, অষ্টম শতকে পাল রাজা ধর্মপাল নির্মাণ করেন। এটি নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। সোমপুর বৌদ্ধবিহার আকারে দক্ষিণ হিমালয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিহার। খ্রিস্টীয় দশম শতকে এই বিহারের আচার্য ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান।


১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। বিহারের চতুর্ভুজ আকৃতির স্থাপত্য পরিকল্পনা এবং লালচে মাটির ওপর এর অবস্থান ইতিহাসপ্রেমীদের কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ।


৩। দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি (উত্তরা গণভবন)


১৮ শতকে নির্মিত দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি, যা বর্তমানে উত্তরা গণভবন নামে পরিচিত, নাটোর শহরে অবস্থিত। রাজা দয়ারাম রায় ১৭৩৪ সালে এই রাজবাড়ির মূল স্থাপনা নির্মাণ করেন। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাসাদটি রাজা প্রমোদনাথ রায় মোগল ও পাশ্চাত্য স্থাপত্যরীতির সংমিশ্রণে পুনর্নির্মাণ করেন।


১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটিকে উত্তরা গণভবন নাম দেন।


৪। পুঠিয়া রাজবাড়ি


পুঠিয়া রাজবাড়ি রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলায় অবস্থিত। এটি মহারানী হেমন্তকুমারী দেবী ১৮৯৫ সালে ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে নির্মাণ করেন। পুঠিয়া জমিদারি মোগল আমলে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এখানকার জমিদারি বাংলার প্রাচীনতমগুলোর একটি।


পুঠিয়া রাজবাড়ি ও আশেপাশের মন্দিরগুলো বাংলার স্থাপত্যকলার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য বহন করে।


৫। মহাস্থানগড়


মহাস্থানগড় বাংলাদেশের প্রাচীনতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এই নগরী প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী হিসেবে পরিচিত ছিল এবং এটি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।


চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙের বর্ণনায় মহাস্থানগড়ের সমৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য স্পষ্ট। এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন শাসকদের শাসনকেন্দ্র ছিল।


এই স্থাপত্যগুলো রাজশাহী বিভাগের ঐতিহ্য ও ইতিহাসের নিদর্শন হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url