ডাহুক কবিতার মূলবক্তব্য ও অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
ডাহুক কবিতার মূলবক্তব্য ও অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
ডাহুক কবিতায় কবি ডাহুককে দেখিয়েছেন জড় জীবনের শৃঙ্খল ও কদর্যমুক্ত আত্মার প্রতীক রূপে। এ আত্মা পরমাত্মাকে ডাকছে, জিকির করছে ক্রমাগত।
প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, নিভৃত বাংলা ব্লগে তোমাদের স্বাগত।
ডিগ্রি ২য় বর্ষের বাংলা বিষয়ক যে পোস্টগুলো করেছি তাতে তোমাদের বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
অনেকেই বলেছো তোমাদের পাঠ্য ডাহুক কবিতা পড়ে কিছুই বুঝতে পারছো না। আবার অনেকেই সহায়ক
বই পড়লেও কবিতার মূলভাব কিছুই ধরতে পারছো না। তোমাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আজকের পর্বে
ডাহুক কবিতার মূলভাব এবং ডাহুক কবিতা থেকে পরীক্ষায় কমন উপযোগী কিছু অতি সংক্ষিপ্ত
প্রশ্ন তুলে ধরছি। এর আগের পর্বগুলোতে আত্মবিলাপ, ঐকতান, চৈতী হাওয়া এবং বনলতা সেন কবিতার মূলবক্তব্য
এবং অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রয়োজন অনুপাতে সেগুলোও দেখে নিতে পারো।
ডাহুক কবিতার মূল বক্তব্য/ ডাহুক কবিতার মূলভাব/ ডাহুক কবিতার মূলসুর/ ডাহুক কবিতার ব্যাখ্যা:
ডাহুক কবিতার রচয়িতা কবি ফররুখ আহমদ, যিনি ছিলেন ইসলামি ভাবধারাপন্ন, সুফি সাধকের মতো একান্ত আধ্যাত্মিক চেতনার এবং ইসলামি রেনেসাঁসের কবি। তাঁর এই কাব্যদর্শনটি ডাহুক কবিতায়ও অত্যন্ত চমৎকারভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এ কবিতায় কবি মূলত ডাহুকের রূপকে এক আধ্যাত্মিক চেতনার প্রেরণা অনুভব করেছেন।
ডাহুক বললে আমাদের মনে এক ধরনের রাত জাগা পাখির চিত্র ভেসে ওঠে যে কিনা রাতভর তারস্বরে ডেকে চলে। কিন্তু তার এই ডাকের ভেতরে কবি ফররুখ আহমদ আধ্যাত্মিক জগতের এক ভাব খুঁজে পেয়েছেন। ডাহুক কবিতায় কবি ডাহুককে দেখিয়েছেন জড় জীবনের শৃঙ্খল ও কদর্যমুক্ত আত্মার প্রতীক রূপে। এ আত্মা পরমাত্মাকে ডাকছে, জিকির করছে ক্রমাগত। তার ডাক গভীরতম বন্দর থেকে, সামুদ্রিক অতলতা থেকে ওঠ যাচ্ছে ঊর্ধ্বপানে। প্রকৃতিকে অতিক্রম করে, মানুষকে উপেক্ষা করে সুরের পিপাসায় উন্মুখ এ শরাবের পেয়ালা মহাশূন্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে পরমাত্মার সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য। তার ডাক নভঃগামী। কিন্তু কবি তার ডাকে সাড়া দিতে পারছেন না। কারণ কবির রয়েছে মানবিক সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতা এবং এ কারণেই তিনি বিষাদময়, বেদনাক্লিষ্ট।
সুফিদের চিত্তধর্ম হচ্ছে আল্লাহর অস্তিত্ব ছাড়া আর সবই মিথ্যে। সৃষ্টির সবকিছু থেকে- পাখিদের ডাক ও কলরব থেকে, সুরা ও সাকির প্রেম থেকে এমনকি প্রকৃতির শোভা থেকেও উৎসারিত হয় আল্লাহ প্রেমের অবারিত ঝরণা। কবির ভাবনা ডাহুক তেমনি একজন আল্লাহ প্রেমিক, ডাহুকের ডাক পরমাত্মাকে তুষ্ট করা আত্মমুক্তির অবিরত জিকির। ডাহুক রাতভর পরমাত্মাকে ডেকে তুষ্ট করতে পারে কেননা তার মানবিক সীমাবদ্ধতা, পারিবারিক কিংবা সাংসারিক দুর্বলতা নেই। কবি তেমনি সর্বক্ষণ পরমাত্মার জিকির করতে পারেন না, কেননা মানবিক সীমাবদ্ধতা কবিকে দুর্বল করে রেখেছে। এজন্যই তিনি কান পেতে ডাহুকের ডাক শোনেন।
ডাহুক কবিতার অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর:
প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, এবার ডাহুক কবিতা থেকে পরীক্ষায় কমন
উপযোগী কয়েকটি অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন তুলে ধরছি। মূল বক্তব্য আলোচনা থেকে আশাকরি সহজভাবে
বুঝতে পেরেছো। এবার অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলি দেখে আয়ত্ত করে নাও।
১। ডাহুক কবিতায় ডাহুকের ডাককে কবি কীসের সাথে
তুলনা করেছেন? [জা.বি ২০১৮]
উত্তর: ডাহক কবিতায় ডাহুকের ডাককে কবি আত্মমুক্তির প্রেরণার
সাথে/ চির জাগ্রত বিবেক ও পবিত্র আত্মার প্রতীকের সাথে তুলনা করেছেন।
২। ডাহুকের সুরে কীসের ইঙ্গিত থাকে? [জা.বি ২০১৬]
উত্তর: ডাহুকের সুরে শৃঙ্খল মুক্তির/ অদৃষ্টলোকের অবিনাশী মহান শক্তির ইঙ্গিত থাকে।
৩। ডাহুক কবিতায় কবি সুরাপাত্র বলেছেন কাকে?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় কবি সুরাপাত্র বলেছেন ডাহুক পাখিকে।
৪। ডাহুক কবিতায় ‘স্বপ্নের প্রবাল’ কী অর্থে
ব্যবহৃত হয়েছে?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় স্বপ্নের প্রবাল স্বাধীন জীবন অর্থে
ব্যবহৃত হয়েছে।
৫। ডাহুক কবিতায় ডুবুরি ডুব দেয় কেন?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় ডুবুরি ডুব দেয় স্বপ্নের প্রবালের আশায়।
৬। ডাহুক কবিতায় সমূদ্রের নীল ঝড় সাড়া তোলে কোথায়?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় সমূদ্রের নীল ঝড় সাড়া তোলে মৃত্যু অরণ্যের
শিরে।
৭। ইসলামি রেনেসাঁসের কবি কে?
উত্তর: ইসলামি রেনেসাঁসের কবি ফররুখ আহমদ।
৮। ডাহুক কবিতায় রাত্রির পেয়ালা উপচে পড়ে কোনটি?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় রাত্রির পেয়ালা উপচে পড়ে ডাহুকের সুর।
৯। ডাহুক কবিতায় ঘুমের নিবিড় বনে শুধু সজাগ প্রহরী
কে?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় ঘুমের নিবিড় বনে শুধু সজাগ প্রহরী ডাহুক।
১০। বেতস বন শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: বেতস বন শব্দের অর্থ বেতের বাগান।
১১। তনুমন শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: তনুমন শব্দের অর্থ দেহমন।
১২। ডাহুক কবিতায় কবি ছলনা খুঁজে পেয়েছেন কীসে?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় কবি ছলনা খুঁজে পেয়েছেন পাশা খেলায়।
১৩। ডাহুক কবিতায় অশরীরী সুর কোনটি?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় অশরীরী সুর ডাহুকের সুর।
১৪। ডাহুক কবিতায় বিশ্রান্ত শাখে ঘুমায় কে?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় বিশ্রান্ত শাখে ঘুমায় মৌমাছি।
১৫। ডাহুক কবিতায় ডাহুকের ডাক ভেসে আসে কীভাবে?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় ডাহুকের ডাক ভেসে আসে নিবিড় আচ্ছন্ন
তিমিরের বুক চিরে।
১৬। ডাহুক কবিতায় ডাহুক পাখি কোথায় অশ্রান্তভাবে
ডেকে যায়?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় ডাহুক পাখি রাত্রির অরণ্যতটে অশ্রান্তভাবে
ডেকে যায়।
১৭। ফররুখ আহমদ জন্মগ্রহণ করেন কবে?
উত্তর: ১৯১৮ সালের ১০ জুন।
১৮। ‘গুলে বকৌলি’ কী?
উত্তর: মধ্যযুগের বাংলা কাব্য।
১৯। ডাহুক কবিতায় কবি কাকে তৃষ্ণাদীর্ণ বলেছেন?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় কবি ডাহুক পাখিকে তৃষ্ণাদীর্ণ বলেছেন।
২০। তৃষ্ণাদীর্ণ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: তৃষ্ণায় কাতর।
২১। ডাহুক কবিতায় কবি কোন সুর চিনতে পারেন না?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় কবি রাত্রের বিরহের সুর চিনতে পারেন
না।
২২। ডাহুক কবিতায় কোন পাড়ার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় ঘুমের পাড়ার কথা বলা হয়েছে।
২৩। ডাহুক কবিতার মূলসুর কী?
উত্তর: ডাহুক কবিতার মূলসুর হলো বেদনাদীর্ণ কবি হৃদয়ের আর্তি।
২৪। ফররুখ আহমদ এর সনেট সংকলন কোনটি?
উত্তর: ফররুখ আহমদ এর সনেট সংকলন ‘মুহূর্তের কবিতা’।
২৫। মুহূর্তের কবিতা কাব্যগ্রন্থটি কত সালে প্রকাশিত
হয়?
উত্তর: মুহূর্তের কবিতা কাব্যগ্রন্থটি ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত
হয়।
২৬। ফররুখ আহমদ মৃত্যুবরণ করেন কবে?
উত্তর: ফররুখ আহমদ মৃত্যুবরণ করেন ১৯ অক্টোবর, ১৯৭৪।
২৭। ডাহুক কোন ধরনের কবিতা?
উত্তর: ডাহুক প্রতীকাশ্রয়ী বা সাংকেতিক বা রূপক কবিতা।
২৮। ডাহুক কবিতায় কে শৃঙ্খলমুক্ত পূর্ণচিত্তের
অধিকারী?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় ডাহুক পাখি শৃঙ্খলমুক্ত পূর্ণচিত্তের
অধিকারী।
২৯। ডাহুক কবিতায় দীর্ঘ রাত্রি কে একা জেগে রয়েছেন?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় কবি একা দীর্ঘ রাত্রি জেগে রয়েছেন।
৩০। ডাহুক কবিতায় ছায়াচ্ছন্ন গভীর প্রহরে কবি
কীসের মুখোমুখি বসে আছেন?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় ছায়াচ্ছন্ন গভীর প্রহরে কবি বেদনার মুখোমুখি
বসে আছেন।
৩১। ডাহুক কবিতায় কবি কাকে সুরাবাহী পাত্রভরা
সাকি বলেছেন?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় কবি ডাহুক পাখিকে সুরাবাহী পাত্রভরা
সাকি বলেছেন।
৩২। ডাহুক কবিতায় কবির সব বেদনা, সব অভিযোগ কেন
নির্বাক হয়ে আসে?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় কবির সব বেদনা, সব অভিযোগ ডাহুকের ডাক
শুনে নির্বাক হয়ে আসে।
৩৩। ডাহুক কবিতায় কবি কান পেতে কীসের ডাক শুনতে
বলেন?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় কবি কান পেতে ডাহুকের ডাক শুনতে বলেন।
৩৪। ডাহুক কবিতায় সুদুর্গম মূল হতে কে সুর তোলে?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় সুদুর্গম মূল হতে ডাহুক পাখি সুর তোলে।
৩৫। ডাহুক কবিতায় কবি কাকে অশরীরী বলেছেন?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় কবি ডাহুক পাখিকে অশরীরী বলেছেন।
৩৬। ডাহুক কবিতায় কী ম্লান হয়ে আসে?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় নীল জোছনা ম্লান হয়ে আসে।
৩৭। ডাহুক কবিতায় কী বনের ফাঁকে চাঁদ ক্ষয়ে আসে?
উত্তর: ডাহুক কবিতায় বেতস বনের ফাঁকে চাঁদ ক্ষয়ে আসে।
৩৮। ফররুখ আহমদ জন্মগ্রহণ করেন কোথায়?
উত্তর: ফররুখ আহমদ জন্মগ্রহণ করেন তৎকালীন যশোর জেলার অন্তর্গত
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝআইল গ্রামে।
৩৯। ফররুখ আহমদ কোন বিষয়ে অনার্স পড়তেন?
উত্তর: ফররুখ আহমদ দর্শন ও ইংরেজি বিষয়ে অনার্স পড়তেন।
৪০। ফররুখ আহমদ অনার্স পড়তেন কোন কলেজে?
উত্তর: ফররুখ আহমদ অনার্স পড়তেন স্কটিশ চার্চ কলেজ (দর্শন)
এবং সেন্ট পল কলেজে (ইংরেজি)।
৪১। ‘নৌফেল ও হাতেম’ কী জাতীয় গ্রন্থ?
উত্তর: ‘নৌফেল ও হাতেম’ ফররুখ আহমদ এর একটি কাব্যনাট্য।
৪২। ফররুখ আহমদ এর পিতা ও মাতার নাম কী?
উত্তর: ফররুখ আহমদ এর পিতার নাম সৈয়দ হাতেম আলী এবং মাতার
নাম রওশন আখতার জাহান।
৪৩। ফররুখ আহমদ এর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কাব্যগ্রন্থের
নাম লেখো।
উত্তর: ফররুখ আহমদ এর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কাব্যগ্রন্থের নাম
হলো: সাত সাগরের মাঝি, সিরাজাম মুনীরা, মুহূর্তের কবিতা, হাতেমতায়ী এবং হে বন্য স্বপ্নেরা।
৪৪। ফররুখ আহমদ এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য শিশুতোষ
গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর: ফররুখ আহমদ এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য শিশুতোষ গ্রন্থের
নাম হলো: পাখির বাসা, হরফের ছড়া, চাঁদের আসর, ফুলের জলসা, ছড়ার আসর এবং নতুন লেখা।
৪৫। ফররুখ আহমদ কর্মজীবন শুরু করেন কী হিসেবে?
উত্তর: ফররুখ আহমদ কর্মজীবন শুরু করেন সাংবাদিক হিসেবে।
প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, এই ছিল ডাহুক কবিতার মূলবক্তব্য এবং পরীক্ষায় কমন উপযোগী অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর। আশাকরি পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে। এগুলো পরবর্তীতে রিভাইজ করার জন্য নিচের শেয়ার অপশন থেকে তোমার সোশাল মিডিয়া টাইমলাইনে শেয়ার করে রাখতে পারো। সবার সুস্থতা কামনা করে আজকে এখানেই শেষ করছি।